এইমাত্র পাওয়া খবর :
Home » , , , » ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এবার আ.লীগের প্রচার-প্রচারণায়

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এবার আ.লীগের প্রচার-প্রচারণায়

Written By Unknown on ১৩ নভেম্বর ২০১৩ | বুধবার, নভেম্বর ১৩, ২০১৩

Search Engine Optimization
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এবার আ.লীগের প্রচার-প্রচারণায়
বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে এমন ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার ‘আলোক উৎসব’ পালন করেছে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ। অথচ বাস্তবে দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে সর্বোচ্চ (বর্তমান) উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ৭ হাজার ৬৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু এই সক্ষমতার সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ এখনো পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। তারপরও এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ কৌশল হিসেবে জনগণের সবচেয়ে বেশি চাহিদার বস্তু বিদ্যুৎকে ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে গত ১২ জুলাই রাত ৮টায় ৬ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট। এরপর চাহিদা বেশি থাকলেও সর্বোচ্চ উৎপাদন ছয় হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেই আটকে ছিল। এমনকি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হওয়ার পরও এই সীমা অতিক্রম করা যায়নি।পিডিবির হিসাবে, বর্তমান সরকারের আমলে স্থাপিত ৫৭টিসহ দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৪টি। এর মধ্যে বর্তমানে অকেজো হয়ে রয়েছে ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে মোট চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের।দেশে স্থাপিত সচল ও অকেজো সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ (বর্তমান) উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ৯ হাজার ৫৯৯ মেগাওয়াট।এর মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে যাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ২ হাজার ৯ মেগাওয়াট।

তাছাড়া জ্বালানি সংকটের কারণেও পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ৯৭৮ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এক হাজার ৬৩৯ মেগাওয়াট।এদিকে সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতায় কথিত ‘মাইলফলক অর্জনে’ ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ ৫০০ মেগাওয়াটের কথা বলা হলেও সেখানে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বোচ্চ আমদানি করা হয়েছে ১৭০ মেগাওয়াট পর্যন্ত।

পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, দেশের অকেজো ও সচল সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতার সঙ্গে আমদানি করা ১৭০ মেগাওয়াট যোগ করলেও সরকারের ঘোষিত ১০ হাজার মেগাওয়াট পূর্ণ হয় না।ভারত থেকে ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত করে পিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাকি বিদ্যুৎ ধাপে ধাপে আমদানি করা হবে।তবে আমদানি করা বিদ্যুৎ নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতার মধ্যে পড়ে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমদানি করা আর দেশে উৎপাদন করা এক বিষয় নয়। তবে যেহেতু চুক্তি হয়েছে সেটা তো নিজেদের বলেই বিবেচিত হবে। এ ব্যাপারে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

তবে ভারত থেকে কম বিদ্যুৎ আমদানির কারণ সম্পর্কে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতের বিদ্যুৎ পরিবাহী সিস্টেম হচ্ছে ৪০০ কিলোভোল্ট। সেখানে আমাদের মাত্র ২৩০ কিলোভোল্ট। সেজন্য ওখান থেকে বিদ্যুৎ এনে তা ২৩০ কিলোভোল্টে কনভার্ট করতে হচ্ছে। এ ধরনের টেকনিক্যাল সমস্যার কারণেই মূলত পুরো বিদ্যুৎ এখনই আনা সম্ভব হচ্ছে না।আলোক উৎসবের সঙ্গে মঙ্গলবারই শুরু হয়েছে জাতীয় বিদ্যুৎ সপ্তাহ-২০১৩, চলবে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। এর আগে প্রতি বছর ডিসেম্বরের ৭ তারিখ থেকে পালন করা হতো এই বিদ্যুৎ সপ্তাহ।

এবার বিদ্যুৎ সপ্তাহ এগিয়ে নিয়ে আসার কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে পিডিবির ওই কর্মকর্তা জানান, আসলে এগিয়ে নিয়ে আসার কারণ সম্পর্কে আমি তেমন কিছু বলতে পারব না। বুঝেনই তো কেন নিয়ে আসা হয়েছে!সরকারের শেষ মুহূর্তে তাদের সাফল্য তুলে ধরে নির্বাচনের আগে এটিকে নিয়ামক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে একটু মুচকি হেসে বলেন, কখন বিদ্যুৎ সপ্তাহ পালিত হবে আর কখন হবে না সেটা তো ওপর থেকে নির্ধারণ করা হয়। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। দলটির প্রচার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগামী দশম নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের প্রচারণায় আওয়ামী লীগ নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। স্লোগান এবং ব্যানার-ফেস্টুনের ভাষাতেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে।গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচার, ঘরে ঘরে চাকরি, ১০ টাকায় চাল, বিনা পয়সায় সার ও পদ্মাসেতু নির্মাণসহ বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ কৌশল হিসেবে জনগণের সবচেয়ে অধিক চাহিদার বস্তু বিদ্যুৎকে ব্যবহার করবে। এবার আর ‘ঘরে ঘরে চাকরি নয়’ এবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিকেই কৌশল হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর এই কৌশলের অংশ হিসেবেই ১০ হাজার মেগাওয়াটের মাইল ফলক অর্জন না হলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে যেহেতু বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা বাড়িয়েছে এবং ভারত থেকেও আমদানি শুরু হয়েছে। তাই তারা এই ইস্যুটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এছাড়া ভারতের পর ভুটান ও নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে বলেও সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন বক্তৃতায় বলছেন।

মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের ‘আলোক উৎসবে’ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ভুটান ও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথা বলেছেন। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী বারবার বলেছেন, এবার কিছুটা লোডশেডিং হলেও আগামীতে লোডশেডিং শব্দটাই আমরা ভুলে যাব।

তিনি বলেন, যদিও প্রধানমন্ত্রী ‘কিছুটা লোডশেডিং ভালো’ এ কথাটি বলবেন। কিন্তু আমি বলব আগামীতে লোডশেডিং থাকবে না।

এ সময় রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের প্রসঙ্গ তুলে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকেই এই পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। কিন্তু আজকের যে মাইলফলক অর্জন এটি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ছাড়া সম্ভব ছিল না।

এসব বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এম. শামসুল আলম বলেন, সরকার বিগত ৫ বছরে বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে কাজ করেছে, এ কথা স্বীকার করতে হবে। হয়তো তারা সফল হতে পারেনি। আসলে তারা তো একটা রাজনৈতিক দল। তারা যেভাবে প্রচার করে স্বস্তি পাবে, সেভাবেই তারা প্রচারণা চালাবে।

বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতাও হিসাবে নেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার তো হিসাবে ধরবেই। কারণ, বন্ধ থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের চার্জ সরকারকে পরিশোধ করতে হয়। সুতরাং চার্জ যখন পরিশোধ করতে হচ্ছে তখন উৎপাদন হোক বা না হোক, সেটা তো তারা দেখবে না।

এ সময় বিদ্যুৎখাতে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই খাতে সরকার প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তিনি (তৌফিক-ই-এলাহী) তো আসলে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি- এসবের দালাল। উনি তো তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

১০ হাজার মেগাওয়াটের সক্ষমতা অর্জন না করেই নির্বাচনের আগে এই প্রচারণাকে আপনি কীভাবে দেখছেন- এর জবাবে প্রফেসর শামসুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে তারা জনগণের কাছে নিজেদের সাফল্য তুলে ধরবে। ভোট চাইবে। এক্ষেত্রে নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইবে এটাই স্বাভাবিক।



অচল বা বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্র :

যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্যান্য সমস্যার কারণে দেশে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। যেগুলো থেকে বর্তমানে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এগুলো কবে নাগাদ সচল করা হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বন্ধ এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে, ঘোড়াশাল এসটি-২ ও ৬, হরিপুর-১, ২ ও ৩, মেঘনাঘাট-১, সিদ্ধিরগঞ্জ এসটি, চট্টগ্রাম রাউজান এসটি-১ ও ২, শিকলবাহা এসটি, সিকলবাহা জিটি, আশুগঞ্জ এসটি-২, আশুগঞ্জ সিসিপিপি, চাঁদপুর সিসিপিপি, ফেঞ্চুগঞ্জ সিসিপিপি (পুরাতন), খুলনা এসটি ১১০ এমডব্লিউ ও খুলনা এসটি ৬০ এমডব্লিউ এবং বাঘাবাড়ি ওয়েস্টমেন্ট।

মেয়াদোত্তীর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র :

বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা মোট চারটি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে খুলনা ৪০ এমডব্লিউ ও খুলনা ৫৫ এমডব্লিউ, ঠাকুরগাঁও ৪৭ এমডব্লিউ এবং শিকলবাহা।

উল্লেখ্য, পিডিবি কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগ উৎপাদন ক্ষমতার যে হিসাব দেখাচ্ছে, তাতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ভাড়াভিত্তিক খুলনা ৪০ ও ঠাকুরগাঁও ৪৭ মেগাওয়াট এবং দ্রুত ভাড়াভিত্তিক খুলনা ৫৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রগুলোকেও ধরা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকারের ঘোষিত ১০ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলকের হিসাব মিলছে না।



Share this post :
 
Auto Scroll Stop Scroll