রাত পোহালেই ভোট। সময় যতই এগিয়ে আসছে ভোটারদের মধ্যে ততোই নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। ভোট দিতে যাবেন কি যাবেন না, এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর শঙ্কা কাটছে না। অনেকেই শলাপরামর্শ করছেন কাছের লোকজনের সঙ্গে। তবে অধিকাংশ ভোটারের কথা, সকালের পরিবেশ দেখে ভোট কেন্দ্রে যাবেন।
এসবকিছু নিয়েই বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোটার। কিছু্ই বুঝে উঠতে পারছে না তারা। ভোটকেন্দ্রে গেলে কী হবে আর না গেলে কী হবে একথা ভেবেও পাচ্ছেন না কোনো কূলকিনারা।রোববারের নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে দেখা গেছে নানা ভয়-আতঙ্ক। আগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আবার ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টির লাঙল দেখা গেলেও পার্টির চেয়ারম্যান নেই। ঘুরে ফিরে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই।
এ পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে গেলে বেজার হবে বিএনপি। আবার ভোট দিতে না গেলে ক্ষিপ্ত হবে আওয়ামী লীগ। তাই কোনো দিকে যাওয়া উচিত এ বিষয়ে সাধারণ ভোটাররা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না।বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার জন্মস্থান বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল কৈঢোপ আবাসনের বৃদ্ধ বুলু মিয়া (৬৫) বললেন, ‘ইডে ক্যাংকা ভোট বারে? হামরাতো বাপের জন্মেও ইংক্যা ভোট দেকিনি। শুনিচ্চি, নিজেরা নিজেরা জয়লাব করিচে।’ ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে একই এলাকার দিনমজুর হয়রত আলী বললেন, ‘ভোট সেন্টারগুলোত আগুন ল্যাগে দেওয়া হচ্চে। এর মদ্যে কেংকা করে ভোট দিবের যামো?’
অবশ্য ভিন্ন কথাও বলছেন কেউ কেউ। পূর্ব বগুড়ার কাহালু পাঁচপীর এলাকার কৃষক বাছেদ মিয়া বললেন, ‘ভোট সেন্টারত তো পুলিশ র্যাব আছেই। সকালে সবকিচু ভালো থাকলে অবশ্যই ভোট দিবার যামো।’রাজশাহীতেও দ্বিধা কাটছে না ভোটারদের। কাকে ভোট দেবেন আর কাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান এমন কোনো আলোচনাই শোনা যাচ্ছে না। দ্বিধা আর শঙ্কা পিছু নিয়েছে ভোটারদের।
ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে হিসাব মেলাতে পারছেন না রাজশাহীর পবা উপজেলার আমগাছি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী নোমান আলী। তিনি বললেন, ‘ভোট কেন্দ্রে যাচ্চি কি না বুঝবার পারিচ্চি না। হিসাব তো আগেই ঠিক হয়ে গেলচে।’ কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত নওহাটা বাজার এলাকার একটি বিদ্যালয়ের পিয়ন পিন্টু বললেন, ‘ভয় তো লাগিচ্চেই। ভোট দিতে না যাওয়ার জন্যে পাকোটে টাকা ভরে দেচ্চিলো। আমি নেই নি কো।’তবে মোহনপুর উল্লাপাড়া এলাকার সবজি ব্যবসায়ি সম্ভু নাথ যে করেই হোক ভোট কেন্দ্রে যাবেন। তিনি বললেন, ‘নিরাপত্তা তো মেলাই আছে শুনিচ্চি। তাই ভয় পাচ্চি না। যাই হোক, কাগজে সিল একটা মারিচ্চি এটাই ফাইনাল।’ পবা উপজেলা বড়গাছি এলাকার মুদি দোকানদার দেলোয়ার বললেন, ‘ভোট দেচ্চি। তবি কোনো দল হিসেবে ভোট দিচ্চি না। ভোট দেয়া নাগরিকের অধিকার তাই ভোট দিচ্চি।’
একই এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বললেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা গোপনে বাড়ি বাড়ি যাচ্চে আর ভোট দিতি মানা করিচ্চে। তারা ভোটকেন্দ্রে যেতে মানা করিচ্চে।’নির্বাচন নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে যশোরের ভোটাররা। তাদের অধিকাংশই বলছেন, কেন্দ্রের নিরাপত্তা থাকলে ভোট দেয়া যেতে পারে। মনিরামপুর সদরের বাসিন্দা গৃহিনী রীনা ঘোষ জানালেন, দুদিন আগে জামায়াত শিবির তাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে গেছে। তাই সকালে পরিবেশ ভালো পেলে ভোট দিতে যাবেন।একই এলাকার কয়েকজন ভোটার মন্তব্য করলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে দুই পক্ষই তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বলছে। তাই কে বেজার হয় এ চিন্তায় ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার ভাবনাই বাদ দিয়েছি।
চৌগাছার শাহাজাদপুরের কৃষক ফারুক হোসেন মনে করছেন, ভোট যেহেতু হচ্ছে তাই ভোট না দেয়ার কারণ নেই। তিনি বললেন, ‘কোনো প্রতীক নয়, ভোট দেব প্রার্থী দেখে।’ ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী এমএ সাঈদ বললেন, ‘ভোট কেন্দ্রে যেতেই হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করা দায়িত্ব।’ তিনি জানান, তাদের এলাকার বেশিরভাগ লোকজন ভোটকেন্দ্রে যাবেন।
যশোর-৪ আসনের ভোটার বাঘারপাড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা চন্দন দাস জানান, তাদের এলাকার আওয়ামী লীগের সব সমর্থকই ভোট দিতে যাবেন। তবে একেবারে রাজনীতির সাথে সম্পর্ক নেই এমন মানুষ সকালের পরিবেশ বুঝে ভোট কেন্দ্রে যাবেন।রাজনীতি বোঝেন না, তবে ভোট এলেই কেন্দ্রে ছুটে যান নোয়াখালীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন। কিন্তু এবার তার মধ্যে কোনো উৎসাহ নেই। বললেন, ‘কেমনে ভোট দিমু। ভোট দিতে গেলে আইসে কইবো আন্ড আমিলীগ। না গেলে কইবো বিএনপি। আন্ডা আমিলীগও অইতে চাই না বিএনপিও অইতে চাই না। তাইলে ভোট না অইলেই বালা অইতো।’
কিছুটা তাচ্ছিলের সুরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ভ্যানচালক নজির উদ্দিন বললেন, ‘ভোট দেয়া নিয়ে বিপদে আছি। বৌরে কইয়া দিছি ভোটের দিন বাপের বাড়িত চইলা যাইতে। নিজেও চিন্তা করছি বাসা থাইকাই বার হমু না।’ অবশ্য কাউকে পরোয়া না করে রাজধানীর ভোটার আবুল হোসেন বলেন, ‘শুনেন, ওরা আওয়ামী লীগ বলুক আর বিএনপি বলুক আমরা কিন্তু ভোটার। কেন্দ্রেও যাবো ভোটও দেবো।

