রাত শেষে সকাল হলেই ভোট দেয়ার পালা। তবে এ নির্বাচন অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। বিরোধী দল ছাড়া আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে ইতোমধ্যে ১৫৩ আসনে ‘শূন্য’ ভোটে ক্ষমতাসীনরা বিজয়ী। আর এ কারণেই আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনের বলে মন্তব্য করছে বিরোধীরা। আর বাকি ১৪৭ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৩০০ কোটি টাকা খরচের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যয় বাবদ ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচনে প্রাক্কলিত ব্যয়ের অর্ধেকের কম খরচ হবে। এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলায় ১৪৪ কোটি টাকা এবং বাকি টাকা নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় করা হবে।
দশম জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘এটা কোনো নির্বাচনই না। ২৪ জানুয়ারির পর যে কোনো সময় আরেকটা নির্বাচন হতে পারে।’এছাড়া যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি নির্বাচনের পর একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেবে সরকার।’এদিকে ১৫২ আসনে বিজয়ীরা সবাই মহাজোটের। একমাত্র জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জোটের বাইরের। তবে তিনি আওয়ামী লীগের একান্তই অনুগত। অর্থাৎ ‘শূন্য’ ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের জন্য সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করেছে।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। কোনো দল আসুক না আসুক সেটা বড় কথা নয়। নির্বাচন তাদের করতেই হবে।সর্বশেষ নবগঠিত দল বিএনএফ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় পার্টির একাংশ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপি (মঞ্জু) এবং তরিকত ফেডারেশন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচন করছে। আর কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে। অর্থাৎ সরকারি দলের আওতায় বিশেষ করে তারা যেভাবে চাইছে সেভাবেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদের দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘গৃহবন্দি’। হাসপাতালে ‘আটক’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মুক্তি চেয়ে ইতিমধ্যে রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সিনিয়র নেতারা জেলে ও আত্মগোপনে রয়েছে। জাতীয় পার্টির অনেক প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ তথা সরকারের পক্ষ থেকে ভয় দেখিয়ে ও হুমকি দিয়ে নির্বাচনে রাখা হয়েছে বলেও দলটির একপক্ষের অভিযোগ। আর এমন অবস্থায় নির্বাচন করে জনগণের ৩০০ কোটি টাকা খরচ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মোহসিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টিই একটি প্রহসন। নির্বাচনের জন্য যে ৩০০ কোটি ব্যায় করা হবে তা জনগণের টাকা। এই টাকা অনৈতিকভাবে খরচ করা হচ্ছে।’
দশম জাতীয় সংসদে আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা এবং সংসদে বিরোধী দল কোনটি হবে এমন প্রশ্নে বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচনের পর বলা যাবে সংসদে কারা বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবে।’ আর প্রতিদ্বন্দ্বীর বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের বাইরে নির্বাচন করছে তারাই প্রতিদ্বন্দ্বী।’ সত্যিকার অর্থে আওয়ামী লীগ বলয়ের বাইরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তেমন কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে যারা শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী তারা প্রায় সবই আওয়ামী ঘরানার। কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। আর জাতীয় পার্টির যে গ্রুপটি নির্বাচনে রয়েছে তারা আওয়ামী লীগের জাতীয় পার্টি দল হিসেবে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ বলয়ের বাইরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোটায়।

