বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশ হিন্দু,বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় জামায়াত শিবির জড়িত এটা একটা শ্লোগানে পরিণত হয়েছে, বাস্তবে এমনটি নয় বরং আওয়ামী লীগই এর সাথে জড়িত।
বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িঘর এবং মন্দিরে হামলার ঘটনার পর বিবিসিকে তিনি একথা বলেন। সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটলে সেটা এখন রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের উপর দোষ চাপানোর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামলাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার একটি সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে।
‘এখন যেমন বলা হচ্ছে জামায়াত-শিবির এটা করেছে। এটা একটা শ্লোগান হয়ে গেছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সব জায়গায় জামায়াত-শিবির এসব হামলার সাথে জড়িত নয়। বরং আওয়ামী লীগের লোকজনই এসব হামলার সাথে জড়িত- সেটা আমরা দেখতে পেয়েছি’।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি জামায়াত-শিবিরই হামলা করে থাকে বা আর যেই করুক না কেন, সরকার কেন তাদের বিচার করছে না? মি: চৌধুরী বলেন, হামলার ঘটনা বন্ধ করতে প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা ব্যর্থ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।বিভিন্ন সময় হিন্দুদের উপর হামলার বিচার না হলেও এবারে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর হামলাগুলোর বিচার হবে কিনা সেদিকে অনেকে নজর রাখছে।
বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার জন্য সরকারের দিক থেকে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে এসব ঘটনার সাথে সরকার দলীয় সমর্থকরাই জড়িত এবং তারা এঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্যে জাতিসংঘের প্রতিও আহবান জানিয়েছেন।বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বিভিন্ন সময় আক্রমণের ঘটনায় সরকার ও বিরোধী জোটের এরকম পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেখা গেলেও অতীতে কখনই হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। হিন্দুদের বাড়িঘর এবং মন্দিরে হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে।পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে দায়ী করেছে। কিন্তু বিচার নেই। মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করেন, বিভিন্ন সময় হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনাগুলো রাজনীতির আবর্তে হারিয়ে গেছে।‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে এসব হামলা হয় বলে এর কোন বিচার নেই’।
মি: পান্না আরো বলেন, হিন্দুদের উপর যে হামলা হয় তার প্রতিটির পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ মি: পান্না বলেন, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর এবং ২০০১ সালের নির্বাচনের পর হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ২০১৩ সাল এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনা বিশ্ববাসী স্বচক্ষে দেখেছেন।
তিনি বলেন, নিন্দা জানানো এক বিষয় আর বিচার করা ভিন্ন বিষয়।
মূলত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ড দেয়ার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা হয়।এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দোষারোপ করেছে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিকে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি পাল্টা বলেছে সরকার দলের ক্যাডাররা হিন্দুদের বাড়িতে আক্রমণ করে বিরোধীদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।
ঘটনা বন্ধ করতে প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা ব্যর্থ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।বিভিন্ন সময় হিন্দুদের উপর হামলার বিচার না হলেও এবারে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর হামলাগুলোর বিচার হবে কিনা সেদিকে অনেকে নজর রাখছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় সরকার জিরো টলারেন্স বা কোন ছাড় না দেবার নীতি অনুসরণ করবে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামালউদ্দিন আহমেদ জানান, হিন্দুদের উপর হামলাগুলোর বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য বিভিন্ন জেলার পুলিশকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মি: আহমেদ জানান, প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে। কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন প্রত্যেকটি হামলার ঘটনায় আলাদা আলাদা মামলা হবে।পাশাপাশি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এবং বিভিন্ন সময় হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনাগুলোর বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যায় কিনা সেটিও সরকার খতিয়ে দেখছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
Home »
জাতীয়
,
National
» জামায়াত শিবির নয় আ.লীগই সংখ্যালঘু হামলায় জড়িত : হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

