এইমাত্র পাওয়া খবর :
Home » , » আমেজবিহীন নির্বাচন আজ

আমেজবিহীন নির্বাচন আজ

Written By Unknown on ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ | রবিবার, জানুয়ারি ০৫, ২০১৪

আজ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন। বিরোধীদলবিহীন এ নির্বাচন নিরুত্তাপ একতরফা। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেশের ৫৯টি জেলার ১৪৭ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের কারণে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভোটের আমেজ ছাড়া।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার প্রতিবাদে তফসিল দেয়ার পরদিন থেকে ছয় দফায় অবরোধ দেয় ১৮ দলীয় বিরোধী জোট। এরপর আবার লাগাতার অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচীর মাধ্যমে নির্বাচন বর্জন ও প্রতিরোধ করে যাচ্ছে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক জোট।
দেশী-বিদেশী নানা চাপ ও সমালোচনার মধ্য দিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পণার অবসান ঘটিয়ে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করতে ভোটারদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বিধানে সেনাবাহিনীসহ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনাসারের পৌনে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এতে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় বিরোধী দল বিএনপিসহ ২৮টি নিবন্ধিত দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
সংবিধানের ১২৩(৩) এর (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ২৫ নভেম্বর রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে ৫ জানুয়ারি তারিখ ঠিক করে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
এ নির্বাচন প্রসঙ্গে ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, “নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ নির্বাচনে অংশ নেবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কাজ করছে।”
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কমসংখ্যক রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, দশম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে মোট ভোটার ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৯৭৭। সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৭০৮ ও ভোটকক্ষ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। তবে, ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ওই সব আসনে ভোটগ্রহণ হবে না। বাকি ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৯০ জন। এদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা চার কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮। ভোট কেন্দ্র ১৮ হাজার ২০৯ ও ভোটকক্ষ ৯১ হাজার ২১৩টি।
এদিকে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে মিছিল, মিটিং, সভা, সমাবেশসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। আইন অনুযায়ী শনিবার রাত ১২টা থেকে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ থাকবে ।
৫৯ জেলার ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণের জন্য সেনাবাহিনির সদস্যসহ পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির কাজ আজ শেষ হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত প্রশিক্ষিত আড়াই লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ইতোমধ্যে দায়িত্ব বুঝে পেয়েছেন বলে ইসির কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোববারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ১২টি রাজনৈতিক দলের ৩৯০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের ১২০ জন, জাতীয় পার্টির ৬৬ জন, জাতীয় পার্টি (জেপি)’র ২৭ জন, গণতন্ত্রী পার্টির ১ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ৬ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ১৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ২১ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৩ জন, গণফ্রন্টের ১ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ২ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ১ জন, বিএনএফের ২২ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১০৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, এ নির্বাচনে এক হাজার ১০৭ প্রার্থী হয়েছিলেন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয় ২৩০ জন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন ৩৩৪ জন। আর বৈধ প্রার্থী ছিল ৫৪৩ জন। এরমধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন নির্বাচিত হন। বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯০ জন। এর আগে ১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনে সর্বোচ্চ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৯ জন নির্বাচিত হন।
এ নির্বাচনে মোট ১৫৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লা-৮ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় অপর এক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। ফলে ওই আসনে ভোটগ্রহন হচ্ছে। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১২৭ জন, জাতীয় পার্টির ২০ জন, জাসদের ৩ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির দুইজন ও জাতীয় পার্টি (জেপি)’র একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন শেষ করতে তিন স্তরের সশস্ত্র বাহিনীসহ পৌনে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, পুলিশ ও আর্মড পুলিশ মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনির ৫০ হাজারের বেশি সদস্য মাঠে রয়েছে। এছাড়া ১৬ হাজার ১৮১ বিজিবি, র‌্যাব ৮ হাজার, পুলিশ ৮০ হাজার, আনসার ২ লাখ ২০ হাজার ও উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ডের দুই শতাধিক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ২-৩ জন অস্ত্রসহ পুলিশ ও পর্যাপ্ত আনসার নিয়োজিত থাকবে।
নির্বাচনে ৩০০ আসনে মোট রিটার্নিং কর্মকর্তার সংখ্যা ৬৬ জন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ৫৭৭ জন। যে ১৪৭টি আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ওইসব আসনে ৬১ জন (দু’জন বিভাগীয় কমিশনার ও ৫৯ জেলা প্রশাসক) রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রয়েছেন ২৮৭ জন। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সংখ্যা ১৮ হাজার ২০৯ জন। সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ৯১ হাজার ২১৩ জন ও পোলিং কর্মকর্তা ১ লাখ ৮২ হাজার ৪২৬ জন। নির্বাচনে ইলেক্টোরাল তদন্ত কমিটির সংখ্যা ১০৩টি (দুই সদস্য বিশিষ্ট)। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৭ জন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২৯৪ জন। বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনী আইন অমান্যকারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সাজা দিতে পারবেন।
বিরোধী দলহীন নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না বলে ইসিকে জানিয়ে দিয়েছে। অন্যান্য নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠালেও এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা ও দেশ এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না বলে ইসিকে জানিয়ে দিয়েছে। তবে কমিশনের অনুরোধে সার্কভুক্ত তিনটি দেশের একটি করে পর্যবেক্ষক টিম বাংলাদেশে এসেছেন। এছাড়া দেশীয় ২২টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ১১ হাজার স্থানীয় পর্যবেক্ষক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানিয়েছে ইসি।
নির্বাচনের ফল ঘোষণা দ্রুত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায় থেকে ফল সংগ্রহের জন্য ১৭টি ভাগে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শুক্রবার তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এবার ম্যানুয়াল ও ডিজিটাল উভয় পদ্ধতিতে ফলাফল সংগ্রহ করবে কমিশন।
নির্বাচন পরিচালনা খাতে ৬৭ কোটি এবং আইনশৃংখলা রক্ষা খাতে ১৪৭ কোটিসহ মোট ২১৪ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ৫৪ কোটি, পুলিশ-র‌্যাব ৪৩ কোটি, আনসার ৪৪ কোটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১ লাখ, কোস্টগার্ড সোয়া ৮ লাখ ও বিজিবিকে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১৬৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।
সংসদ নির্বাচনের ফল প্রকাশের সময় কমিশন সচিবালয় ও আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কমিশনের নিরাপত্তা বাড়াতে শুক্রবার কমিশন সচিবালয় থেকে পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও আশপাশ এলাকাজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়মিত টহল দেন। কমিশন সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
Share this post :
 
Auto Scroll Stop Scroll