‘যারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে ওনার দায়িত্বহীনতা ও বিকৃত মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। কোনো রাজনৈতিক দল সম্পর্কে তিনি এ ধরণের কথা বলতে পারেন না। এছাড়া তিনি অনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন বলেও তারা দাবি করেন।
তাদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা একতরফা নির্বাচন করে দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। শাসক শ্রেণী ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে এ ধরনের বক্তব্য তিনি দিতে পারতেন না বলেও তারা দাবি করেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা কোনো কথা বলতে চাই না। ওনার (প্রধানমন্ত্রী) কথা উনি বলেছেন। আমাদের কী বলার আছে? আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’ সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।এ ব্যাপারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের জোটের (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এনডিএফ) পক্ষ থেকে আনুষ্ঠাকিভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আসম রব বাংলামেইলকে বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ ভোটার অংশ নেয়নি। এ বক্তব্যের মাধ্যমে এসব মানুষকে অসম্মান ও তাদের মতামতকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর বিকৃত মানসিকতার পরিচয়। দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে তার এ সংবাদ সম্মেলনে কোনো দিক নির্দেশনা ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ এই তামাশার নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও তা উপলদ্ধি করতে পারেননি।’শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেউ নির্বাচনে অংশ না নিলেই সে স্বাধীনতাবিরোধী, আমি ওনাকে প্রশ্ন করতে চাই, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন? কোথায় যুদ্ধ করেছিলেন?’গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শাসকশ্রেণী কখনো ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তার প্রতিফলন হয়েছে। তারা যদি ইতিহাস থেকে ন্যূনতম শিক্ষা নিতো, তাহলে তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারতেন না।’ তিনি এই বক্তব্যের নিন্দা জানান।
এ ব্যাপারে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক অধ্যাপক আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের সার্টিফিকেট দেয়ার দায়িত্ব ওনাকে (শেখ হাসিনা) কে দিয়েছেন? তিনি কোনো রাজনৈতিক দল সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারে না। শেখ হাসিনা অনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার বাবাও বাকশাল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার পরিণতি আপনাদের জানা আছে।’
এই বাম নেতা আরো বলেন, ‘বাম মোর্চাসহ অনেকগুলো দল এই ভোটারবিহীন নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আর এই এক তরফা নির্বাচনে অংশ না নিলেই স্বাধীনতাবিরোধী। এটা কোনো গণতান্ত্রিক ভাষা হতে পারে না।’
প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেলে নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী।’ এ বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘পাকা কমিউনিস্টদের আমি নিয়ে নিয়েছি। এখন যারা আছে তারা বহুধাবিভক্ত। তারা শুধু ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত থাকে।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানোর ঘোষণা দিয়েছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)।

