এইমাত্র পাওয়া খবর :
Home » , » বিদেশিদের তুষ্ট করতে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে সরকার

বিদেশিদের তুষ্ট করতে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে সরকার

Written By Unknown on ১৫ নভেম্বর ২০১৩ | শুক্রবার, নভেম্বর ১৫, ২০১৩

Search Engine Optimization

দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ফের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করছে সরকার। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিদেশিদের তুষ্ট করতেই এই নীতি গ্রহণ করা হয়। দুই ভারতীয়সহ চার বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে এই সপ্তাহেই জনস্বার্থবিরোধী এমন একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার ও পেট্রেবাংলা।বঙ্গোপসাগরের অগভীর অংশে ৪, ৭, ৯ ও ১১ নম্বর ব্লকে অনুসন্ধান চালাবে বিদেশি এ কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে ভারতীয় কোম্পানি ও এনজিসি ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে, ৭ নম্বর ব্লকে মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস এবং ১১ নম্বর ব্লকে যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি স্যান্টোস এবং সিঙ্গাপুরের ত্রিক্রস এনার্জি অনুসন্ধান চালাবে।

বিদেশি এ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। মন্ত্রিসভা এরই মধ্যে অনুমোদনও দিয়েছে। তবে ডকুমেন্টস এখনো পেট্রেবাংলায় এসে পৌঁছায়নি। মন্ত্রিসভার পদত্যাগের আগ মুহূর্তে এ চুক্তিটি সম্পন্ন হবে। পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।চুক্তিটি দেশ ও জনস্বার্থ বিরোধী হওয়ায় কালক্ষেপণ করছে সরকার। ক্ষমতার শেষ মুহূর্তে তারা বাড়তি কোনো ঝামেলা নিতে চাচ্ছে না। এ জন্য কৌশলগত কারণেই ক্ষমতার শেষ দিকে চুক্তির কাজটি সেরে যেতে চায় সরকার।

যেভাবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি: চুক্তিটি করতে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি বা মডেল পিএসসি-২০১২ একাধিকবার সংশোধন করেছে বর্তমান সরকার। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সর্বশেষ সংশোধনীটি গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুমোদন করে।নতুন এ সংশোধনীও করা হয়েছে আগের মতো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়াতেই। নেওয়া হয়নি কোনো পক্ষের মতামত। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া সত্ত্বেও আলোচনা হয়নি জাতীয় সংসদে। মূলত এ সংশোধনীতে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থকেই বড় করে দেখা হয়েছে। বিদেশি কোম্পানিকে অধিক মুনাফা করার সুযোগ, মূল্য নির্ধারণে দেশের স্বার্থ প্রাধান্য না দেওয়া এবং কস্ট রিকভারির নামে উত্তোলিত গ্যাসের প্রায় ৯০ ভাগই বেহাত করা হয়েছে এই পিএসসিতে।

যা আছে এই পিএসসিতে: সংশোধিত এই পিএসসিতে অনেক কিছুই আছে। তবে তার পুরোটাই বিদেশি কোম্পানির জন্য। আমাদের জন্য আছে কিছু উচ্ছিষ্টের ব্যবস্থা। এই পিএসসিতে গ্যাসের দাম পাঁচ ডলার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ছয় ডলার করা হয়েছে। প্রতি বছর এই দাম আবার দুই শতাংশ হারে বাড়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। কস্ট রিকভারি (উৎপাদন খরচ) নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ শতাংশ, যা আগে ছিল ৫৫ শতাংশ। এরপর আবার ৩৭ শতাংশ করপোরেট কর বিদেশি কোম্পানির বদলে পরিশোধ করতে হবে পেট্রোবাংলাকে।

কস্ট রিকভারি বা উৎপাদন খরচ বাদ দিলে যা থাকে তাকে বলা হয় প্রফিট গ্যাস। ৭০ শতাংশ কস্ট রিকভারি বাদ দেওয়ার পর প্রফিট গ্যাস থাকে ৩০ শতাংশ। এই প্রফিট গ্যাস সমানভাবে ভাগ হবে বিদেশি কোম্পানি ও পেট্রেবাংলার মধ্যে। সে হিসেবে পেট্রেবাংলা পাওয়ার কথা ১৫ শতাংশ। কিন্তু না। এই ১৫ শতাংশের মধ্য থেকে বিদেশি কোম্পানির করপোরেট কর ৩৭ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে পেট্রোবাংলাকে। সুতরাং সব খরচ বাদ দিয়ে ১০ শতাংশ গ্যাসও জুটবে না পেট্রোবাংলার থলিতে।

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, এর আগে অগভীর সমুদ্রের সাঙ্গু ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করেছে বিদেশি কোম্পানি কেয়ার্ন। তাদের সঙ্গে যে চুক্তি ছিল তাতে কস্ট রিকভারি নির্ধারণ ছিল ৫৫ শতাংশ। তখন পেট্রোবাংলা গ্যাস পেয়েছিলো ২.৭৫৯ এমএমসিএম, যা মোট গ্যাসের মাত্র ১৯.৯৪ ভাগ। এতে দেখা যায়, কস্ট রিকভারির ওই যুগে ৫৫ শতাংশ রিকভারিতে আমরা মোট ২০ ভাগ গ্যাসও পেতাম না। আর এখন তো খরচ আরো বাড়বে। এখন ৭০ শতাংশ রিকভারি দিয়ে ১০ শতাংশ গ্যাসও জুটবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।কারণ, সাঙ্গু ক্ষেত্রে কেয়ার্নের রিকভারি খরচ ১০.৮১ মিলিয়ন থেকে তিন দফায় বেড়ে দেখানো হয়েছিলো ৬৬০ মিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে এখন খরচ আরো বাড়ার কথা।

এছাড়াও উত্তোলিত গ্যাসের রপ্তানির বিষয়টি সুরাহা করা হয়নি এই পিএসসিতে। এর আগের পিএসসি অর্থাৎ মডেল পিএসসি-২০০৮ এ এলএনজিতে রূপান্তরিত করে গ্যাস রফতানির বিষয়টি উল্লেখ ছিল। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা হওয়ায় নতুন এই পিএসসিতে রপ্তানির বিষয়টি সরাসরি বলা হয়নি। আবার রফতানি করা যাবে না এমন কোনো কথাও উল্লেখ করা হয়নি। এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে রপ্তানির করারই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।বলা হয়েছে, উত্তোলিত গ্যাসের অর্ধেক অংশের প্রথম দাবিদার পেট্রেবাংলা, পেট্রোবাংলা কিনতে না পারলে দেশের ভেতরে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করা যাবে। আর বাকি অর্ধেক গ্যাস বিদেশি কোম্পানি সরাসরি বেশি দামে (সাড়ে ছয় ডলারের বেশি) দেশের ভেতরে অন্য কোনো কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে পারবে।

শুভঙ্করের ফাঁকিটা এখানেই। কোথাও বলা নেই কি হারে গ্যাস উৎপাদন হবে। সুতরাং বেশি পরিমাণে উত্তোলিত গ্যাস কোম্পানির বেধে দেওয়া দামে দেশের কোম্পানি কিনতে না পারলে তখন রপ্তানি ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।এর আগের পিএসসিকে পাশ কাটিয়ে অনেক কিছুই করেছে সরকার। স্যান্টোসকে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুবিধা দেওয়া হয়েছিলো পিএসসিকে পাশ কাটিয়েই। নতুন পিএসসিতে যেহেতু রপ্তানি বিষয়ক কোনো কথা উল্লেখ নেই। সুতরাং এটাকে পাশ কাটানো আগের চেয়ে আরো বেশি সুবিধাজনক হবে।

এছাড়া মালিকানা হস্তান্তরের বিষয় নিয়েও জটিলতা রয়ে গেছে এই পিএসসিতে। যদিও এ জন্য পেট্রোবাংলার অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক যাচাই-বাছাই করে যখন কোনো কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়, তখন ওই কোম্পানি যদি কিছু মুনাফার লোভে কাজ শুরুর আগেই কোনো অদক্ষ কোম্পানির কাছে প্রকল্প বিক্রি করে যায় তাহলে পুরো প্রকল্পটাই ভেস্তে যেতে পারে।

কেন এই নতুন কৌশল: ঘন ঘন পিএসসি সংশোধন করেছে সরকার। প্রতিবারই বিদেশি কোম্পানির জন্য বাড়ানো হয়েছে সুযোগ-সুবিধার পরিমাণ। একবারে বিদেশি কোম্পানিকে এত বেশি সুবিধা দিলে চোখে বাধে। গণআন্দোলন জোট বাঁধার সম্ভাবনা থাকে। তাই নতুন কৌশলে পথ হাঁটছে সরকার।

আগে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো পাঁচ ডলার। এই দাম তখন বেশি বলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো। এরপরও আবার দাম বাড়িয়ে সাড়ে ছয় ডলার করা হয়েছে। এ দাম আবার প্রতি বছর ২ শতাংশ হারে বাড়বে। কিন্তু এই মূল্য নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। কারণ, চোখ ঘুরানো হয়েছে অন্যদিকে। তা হচ্ছে কস্ট রিকভারি। যা ৫৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭০ শতাংশ। সবার নজর এখন কস্ট রিকভারির দিকেই।

এক বছর সময় নিয়ে মডেল পিএসসি-২০১২’র এই জায়গাগুলোতে এমনভাবে পরিবর্তন আনা হয়েছে যাতে পেছনের সব কিছু সিদ্ধ হয়ে যায়। হয়েছেও তাই। দাম বৃদ্ধি নিয়ে কারো কোনো কথা নেই। অথচ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে হওয়া পিএসসিতে গ্যাসের দাম সাড়ে ছয় ডলার রাখলে দেশে বিদ্রোহ ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই আশঙ্কা এড়াতেই সরকার ধাপে ধাপে গা সওয়া নীতি নিয়ে এগোয়।


Share this post :
 
Auto Scroll Stop Scroll