এইমাত্র পাওয়া খবর :
Home » , » জনগণের পক্ষ থেকে ‘স্পষ্ট হুঁশিয়ারি’

জনগণের পক্ষ থেকে ‘স্পষ্ট হুঁশিয়ারি’

Written By Unknown on ০৬ জানুয়ারি ২০১৪ | সোমবার, জানুয়ারি ০৬, ২০১৪

Search Engine optimization
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুই নেত্রীর জন্যই জনগণের পক্ষ থেকে ‘স্পষ্ট হুঁশিয়ারি’। প্রধান বিরোধী দল ছাড়া একতরফা এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেমন সাড়া পায়নি, ঠিক তেমনি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জনগণকে নির্বাচন প্রতিহত করার আহ্বান জানালেও জনগণ নিশ্চুপ থেকেছে। তারা ভোট দিতেও আসেনি, বাধাও দেয়নি।

কথায় কথায় ‘জনগণ সঙ্গে আছে’ বলে দম্ভোক্তি প্রকাশ করলেও জনগণ যে দুই নেত্রীর সঙ্গে নেই তাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এ নির্বাচনের মাধ্যমে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৩৪টি ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট দিতে আসেননি। ওইসব কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক কি নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু তারা ভোট দেননি। তার মানে সেখানে হাসিনার আহ্বান ব্যর্থ। আবার জনগণের বাধার কারণে যে ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি তাও নয়।

অন্যদিকে অনেক কেন্দ্রে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছেন। সেখানে জনগণ কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করতে চেষ্টা চালায়নি। বরং তারা বিষয়টি উপেক্ষা করে নিজের ঘর-সংসারে নীরব সময় কাটিয়েছে। তার মানে সেখানে খালেদা আহ্বানও ব্যর্থ।

এছাড়া নাশকতার ঘটনায় ১৮ জেলায় ৪শ ভোটকেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এসব নাশকতার ঘটনায় কোনোভাবেই সাধারণ মানুষ জড়িত নয়। প্রতিটি কেন্দ্রেই গুটিকয়েক দুর্বৃত্ত এসব নাশকতা চালিয়েছে। এক্ষেত্রেও খালেদা হাসিনা ব্যর্থ। কারণ হাসিনার যে কোনো মূল্যে নির্বাচন করার ঘোষণা সেখানে ব্যর্থ। আবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে খালেদার নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণাও ব্যর্থ। কারণ সেখানে জনসম্পৃক্ততা ছিল না। 

এমন অবস্থায় বলাই যায়, এ নির্বাচনে জনগণ তাদের ‘পাওয়ার’ দেখিয়েছে। যার ফলে দুই দলই ভেতরে ভেতরে জ্বলছে। নির্বাচনে বেশি ভোট না পড়ায় আওয়ামী লীগ জ্বলছে, অন্যদিকে নির্বাচন প্রতিহত না করতে পেরে বিএনপি জ্বলছে।

আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছিল, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। কিন্তু নির্বাচনের দিন দেশব্যাপী সহিংসতায় ১৮ জনের প্রাণ গেছে। অনেক কেন্দ্রে কম ভোট পড়লেও বেশি ভোট দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ২৫ জনেরও বেশি প্রার্থী ভোটের দিনেই নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে আসতে ভোটারদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা বললেও তারা তা নিশ্চিত করতে পারেননি। তারপরও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।

অন্যদিকে বরাবরের মতো বিএনপি বলেছে, জনগণ প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করেছে।

কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, দুই দলের দাবিই জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ জনগণের কাছে এ নির্বাচন সফলও নয়, প্রহসনও নয়। এটা দুই দলের দুই নেত্রীর জেদের একটা ‘ফসল’। আর জনগণের টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। 

এ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বলছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে দুই নেত্রীই জনগণের কাছে পরাজিত হয়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের প্রায় সব নির্বাচনেই বাংলাদেশে ভোট কলঙ্কিত হয় বারবার। নব্বই দশকের পর ৯৬ সালে ভোট হয়েছিল একতরফা। যে নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী বয়কট করেছিল।

সেই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। যেখানে ভোটের ইতিহাসে উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে কম।

আর বোরবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে কত ভাগ ভোট পড়বে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের কৌতুহল ছিল। নির্বাচনের আগের দিন বিভিন্ন জেলা থেকে যেসব খবরাখবর আসছিল তাতে মনে হয়েছিল ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

কিন্তু ভোটের পর ঠিক এর উল্টো চিত্র পাওয়া গেলো। কমিশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য সারাদেশে সেনাবাহিনী, যৌথবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেললেও ভোট পড়েছে মাত্র ২৪ থেকে ২৫ ভাগ। অনেক কেন্দ্রেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে শূন্য ভোট পড়েছে।

বিভিন্ন স্থানে জনগণের আলোচনায় শোনা গেছে, যত কথাই বলা হোক না কেন ৫ জানুয়ারি নির্বাচনী ফল দিয়ে শেখ হাসিনা আবার ৫ বছর দেশ শাসন করতে চাইবেন। আরেকটি নির্বাচন খুব দ্রুত হবে এমন আশা যারা করছেন, তারা হতাশ হবেন অল্পদিন পরেই। বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা হবে। জামায়াত নির্মূল হবে। মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। প্রশাসন আরো দলীয়করণে আবদ্ধ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভিন্ন দায়িত্ব পাবে বলেও অনেকে মনে করছেন।

সর্বোপরি মানবাধিকারের সংজ্ঞা পরিবর্তন হবে। গণতন্ত্র বন্দি হয়ে যাবে চার দেয়ালে। অবিশ্বাস্য বা নাটকীয় কিছু ঘটলে হয়তো অন্ধকার থেকে আলো আসবে। তা না হলে বাংলাদেশিরা একপর্যায়ে আত্মসমর্পণ করবেন অন্য শক্তির কাছে। কোনোদিন টের পেলেও শুধু আফসোস করা ছাড়া কিছুই থাকবে না।

Share this post :
 
Auto Scroll Stop Scroll